ঢাকা,সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে আবদুলবারী পাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
টানা দু’দিনের ভারি বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়া ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া। দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা না নিলে শতশত ঘর-বাড়ি ও মসজিদ নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত দুইদিনের ভারি বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফাঁশিয়াখালী, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে শতশত ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের রাস্তাঘাট গুলো যান চলাচলের জন্য অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে ঝুকির মধ্যে রয়েছে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারীপাড়া ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া। গত দুদিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাতামুহুরী নদীর দু’পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা না নিলে ভাঙ্গন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
এদিকে বন্যার বৃদ্ধি ও পাহাড় ধস থেকে রক্ষার জন্য উপজেলাবাসীকে সর্তকতা জারি করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২-৩ দিন অত্র এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল ও নদী ভাঙ্গনের সম্ভবনা রয়েছে। তাই, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিচু স্থানে বন্যায় আক্রান্ত পরিবার, নদীর তীরবর্তী পরিবার ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত জনগনকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
অপরদিকে গতকাল চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী ও কক্সবাজার পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিউর রহমান পৌরসভার আবদুলবারী পাড়ার ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। একইদিন তারা লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর হাজীপাড়া অংশটি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে স্থানীয় জামে মসজিদটি হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে নদীর অবস্থান একেবারে গ্রামের নিকটে চলে এসেছে। এ অবস্থায় মসজিদের আশপাশ এলাকার হাজারো জনবসতি, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছিকলঘাটা-কৈয়ারবিল সড়কসহ গ্রামীণ জনপদের কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে। এতে এলাকাবাসির মাঝে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অর্ধশত বছরের পুরানো জামে মসজিদ ও গ্রামের জনবসতি রক্ষায় ঝুঁিকপুর্ণ ওই পয়েন্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।
ইতোমধ্যে হাজীপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.শহীদ উল্লাহ লিখিতভাবে আবেদন করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে। তাঁর আবেদনটি সরেজমিন বিবেচনাপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম সুপারিশও করেছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিগত দুই দশকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন কমপক্ষে ১০হাজার পরিবার। এসব পরিবার বেঁেচ থাকার তাগিদে ঠাই নিয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলে। নদীতে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে হাজার হাজার জনবসতি ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, দোকান-পাট, মসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ভাঙ্গনে আতঙ্কে বর্তমানে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক জনসাধারণ।
লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার চকরিয়া নিউজকে বলেন, তার ইউনিয়নের বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে হাজিপাড়া পয়েন্টে ৩৩ হাজার ভোল্ডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। হাজী পাড়ার মসজিদ, গুরুত্বপুর্ণ একাধিক গ্রামীণ সড়ক, ফসলী জমি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ হাজারো জনবসতি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনে তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। বর্তমানে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজিপাড়া জামে মসজিদ ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড এর আবদুলবারী পাড়াটি। ইতোমধ্যে এলাকা দুটি আমি পরিদর্শন করেছি। পাউবো চাইলে মসজিদের পাশে চলমান প্রকল্পের আওতায় মসজিদটি রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। তাতে মসজিদটি নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া শাখা কর্মকর্তা তারেক বিন সগীর চকরিয়া নিউজকে বলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজিপাড়া পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে বর্তমানে দুইশত মিটার পাথরের ব্লক দ্বারা টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে মসজিদ এলাকাটি সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ পর্যাপ্ত না হওয়ায় শুধু মাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এলাকাটি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তারপরও মসজিদ এলাকাটি রক্ষার্থে জরুরী প্রকল্পের আওতায় একশত মিটার এলাকাজুড়ে নতুনভাবে জিও ব্যাগ বসানোর জন্য টাকা বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে পাউবোর উপর মহলে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত হলে সেখানে কাজ শুরু করা হবে।

পাঠকের মতামত: